When did the land survey work, why was it is started ?

ভূমি জরিপের কাজ কবে, কেন শুরু হয়েছিল ? When did the land survey work, why was it is started ?


ভূমি জরিপ হচ্ছে ভূমির মালিকানা সম্বলিত ইতিহাসের সরেজমিন ইতিবৃত্ত। আইনী সংজ্ঞা হচ্ছে, The Survey Act, 1875 এর ২ ধারা অনুযায়ী, ‘জরিপ’-এর অন্তর্ভুক্ত হইবে সীমানা চিহ্নিতকরণ, নদীতীর বরাবর ক্ষয়প্রাপ্ত বা বৃদ্ধিপ্রাপ্ত জমি, নদীর গতি পরিবর্তনের ফলে পুনঃউদ্ভব বা নূতন উদ্ভবকৃত জমির পরিমাণ নির্ধারণ এবং জরিপের সহিত যুক্ত পূর্ববর্তী সকল কার্যক্রম।

বাংলা, বিহার, উড়িষ্যা, অসমের অতি উর্ব্বর পণ্য শষ্য উৎপাদনকারী বিশাল এলাকা ছিল ইংরেজদের আয়ের প্রধান উপায়। ইংরেজরা জমিদারী প্রথা সৃষ্টির মাধ্যমে উচ্চ হারে কর আদায় করত এই এলাকা থেকে।

ভারতবর্ষে ইংরেজরা আসার পূর্বে শেরশাহ সর্বপ্রথম জমিতে উৎপন্ন ফসলের রকম অনুযায়ী (এক ফসলী, দুই পসলী, তিন ফসলী জমি জরিপ করান সঠিক কর ধার্য্য করার উদ্দেশ্য । পাট্টা ও কবুলিয়ত ব্যবস্থার মাধ্যমে জমিতে কৃষকের অধিকার ও কর্তব্য স্থির হতো। পরবর্তীকালে সম্রাট আকবরের আমলে রাজা টোডরমলের নেতৃত্বে শেরসাহ দ্বারা চালুকরা পদ্ধতির কিছু সংশোধন করা হয়। ১৯৬০ সালে সম্রাট ঔরঙ্গজেবের আমলে অভিভক্ত বাংলার মানচিত্র তৈরী করেন ভ্যানডেন ব্রুক। খুব ছোট স্কেলে এই মানচিত্র তৈরী করা হয়েছিল।

ভারতবর্ষে ইংরেজ শাসনের প্রথম দিকে কোলকাতা তথা অভিভক্ত বঙ্গদেশ ছিল তাদের উৎসস্থল ও দেশ ব্যাপী সাম্রাজ্য বিস্তারে সবথেকে গুরুত্বপূর্ন কেন্দ্র। ইংরেজরা নিজেদের স্বার্থে বাংলার জমি জরিপের কাজে হাত দেয়। ইংরেজ সরকার জেমস রেনেলকে দায়িত্ব দেন গ্রাম বাংলার বড় বড় নদীপথের মানচিত্র তৈরী করতে। রেনেল ১৭৬৪ সালে ২১/০৩/১৭৬৪ - ২৮/০৩/১৭৬৪ প্রথম কাজ শুরু করেন জলঙ্গী থেকে গঙ্গা-মেঘনার সঙ্গমস্থলের মানচিত্র নির্মানের ঐ বছরই মে মাসে দামোদর গ্রাম থেকে কুষ্টিয়া পর্যন্ত গঙ্গার মানচিত্র নির্মান করেন। এই সময় তিনি ইচ্ছামতী নদী মেঘনার শাখা নদী ধলেশ্বরী, ঢাকা অবধি বুড়ি গঙ্গাসহ আরো অনেক নদ-নদী মানচিত্র অঙ্কন করেন ।

জেমস রেনেলের অঙ্কন করা মানচিত্রের উপর ভিত্তি করে ইংরেজ সরকার চিরস্থায়ী বন্দোবস্তোর মাধ্যমে নদীর দুই পাশের জমি বন্টনের কথা ঘোষনা করেন । কিন্তু এই সিদ্ধান্ত মেনে না নিয়ে জমিদারগণ আদালতের দ্বারস্থ হন পূর্বে কোন বিজ্ঞপ্তি/আদেশ জারি হয়নি এই বলে। রেনেলের অধন করা মানচিত্রগুলির আইনগত বৈধতা চ্যালেঞ্জ করেন। লণ্ডনের প্রিভি কাউন্সিল আবেদন কারীদের পক্ষে রায় দেনা এবং মানচিত্রগুলির আইনি বৈধতা অঙ্গীকার করা হয়। ১৭৭৯ সালের অক্টোবর মাসে সার্ভে জেনারেল অফ ইন্ডিয়া-র তত্ত্বাবধানে একটি মানচিত্র প্রকাশিত হয়। তবে রেনেলের মানচিত্র গুলিতে গ্রাম বাংলার যে ছবি ছিল তা অত্যন্ত নিখুঁত ও বিজ্ঞান সম্মতভাবে তৈরী হয়েছিল। এই সকল কারণে বাংলা তথা ভারতীয় জরিপ জেমস রেনেলের কাছে ঋনী।

১৭৮৪ সালে ইংরেজ সরকারের নির্দেশে আপজন ১৭৫৬ সালের কোলকাতার মানচিত্র তৈরী করেন। এর পর ১৭৮৪-৮৫ সালে কর্নেল মার্ক উড আর একটি কোলকাতার মানচিত্র প্রস্তুত করেন ।

আপনজনের তৈরী করা কোলকাতার খণ্ড মানচিত্র খুশি হয়ে সরকার বাহাদুর তাকে ফোর্ড উইলিয়াম ও তার আশে পাশের এলাকা জরীপের দায়িত্ব দেন। ৮-ইঞ্চি-১ মাইল এই স্কেলে সুন্দরভাবে এই মানচিত্র প্রস্তুত করেন। ঐ মানচিত্রে দেখা যায় শিয়ালদা, কলেজস্ট্রীট, বালিগঞ্জ, ভবানীপুর প্রভৃতি এলাকাতে আলযুক্ত জমিতে প্রচুর ধান, পাট প্রভৃতি কৃষিজ পণ্য উৎপাদিত হতো।

১৮৩৭ থেকে ১৮৪০ সাল অবধি F.W.Sima সাহেব একটি বড়ো স্কেলে কোলকাতার মানচিত্র অঙ্কন করেন।

এরপর ১৮৬৯ সালে Mr.BILON এর নেতৃত্বে কোলকাতার যে জরীপ হয়েছিল তাতে দেখা কোলকাতা থেকে বরানগর অবধি এই এলাকা যেখানে ৫৫টি গ্রামের একটি স্পষ্ট ছবি দেখা যায়। ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষ দিকে (১৮৮৭-১৮৯৩) কোলকাতার শেষ জরিপ করে সার্ভে অব ইন্ডিয়া ১ ইঞ্চি = ৫০ ফুট স্কেলে।

আমাদের দেশে ১৭৭২ সালে ইংরেজ রা প্রথমে অধিক রাজস্ব আদায়ের উদ্দেশ্যে বছরের জন্য ও পরে ৩ ও ৫ বছরের জন্য জমির বন্দোবস্ত দেওয়া শুরু করে । কিন্তু তাতে ও রাজস্ব সংগ্রহ আশানানুরুপ না হ ও যায় ১৭৮৯ সালে দশ শালা বন্দোবস্ত (Decennial Sittlement of 1789)প্রমার চালু করল। কিন্তু এই দশসালা বন্দোবস্ত ও প্রত্যাশা পূর্ন করতে না পারায় ইংরেজ সরকার চালু করল ঐতিহাসিক চিরস্থায়ী বন্দোবসতো ১৭৯৩ সালে। কৃষকশ্রেনী জমিদার শ্রেনীর মাধ্যমে খাজনা আদায় করত। সরাসরি সরকারের কাছে কৃষকদের যোগাযোগ ছিল না। বিজ্ঞান সম্মত ও সঠিক মানচিত্র তৈরীর পারুন প্রয়োজনীয়তা অনুভব করল।

১৮২২ সালে জমিদারী বা তৌজির সীমানা নির্ধারণের জন্য একটি জরিপ কার্য করা হয় । প্রত্যেক তৌজির সীমানায় থাকে থাকে মাটির উঁচু ঢিবি সাহায্যে সীমানা নির্দেশ করা হয় ও প্রত্যেক ঢিবির একটি তৌজি নম্বর দেওয়া ছিল। জেলা কালেক্টারের দপ্তরে ঐ তৌজি নং সংরক্ষিত আছে। মৌজাকে রাজস্ব জরিপের নূন্যতম একক ধরে মেদিনীপুর থেকে প্রথম রাজস্ব জরিপ বা (Revenue Survey) শুরু হলো।

১৮৫২ সাল অবধি কর্নেল স্মিথের তত্ত্বাবধানে অবিভক্ত ২৪ পরগণায় রাজস্ব জরিপের কাজ শেষ হয়। এই জরিপের মাধ্যমে মৌজার সীমানা নির্ধারিত হয়। ১ ইঞ্চি ৪ মাইল স্কেলে। এই মানচিত্রে কোন দাগের সীমানা উঠল না।


G T. S. (The Great Trigonometrical Surrvey)

গোটা ভারতবর্ষের নিখুঁত মানচিত্র প্রস্তুতের উদ্দেশ্যে মিস্টার উইলিয়াম লাইটন ১৮০২ সালের ১০ এপ্রিল মাদ্রাজের সেন্ট টমাস পর্বতের পূর্ব দিক থেকে সমগ্র ভারতে কতকগুলি মূল জরিপ কে (Survey Station) স্থাপন করেন । এই জরিপকে বলে G.TS Great Ingonometical Survey.

কোন ত্রিভুজের তিনটি কোর ও একটি বাহুর পরিমান জানলে ঐ মাপগুলির সাহায্যে ত্রিভুজটির অপর দুই বাহুর পরিমাণ সম্ভব । নানা বাহুকে বেস লাইন (Base line) বলে। প্রত্যেক বাহুর দৈর্ঘ্য ১০ বা তার বেশী মাইল নেওয়া হয়। ঐ ত্রিভুজের বিন্দুগুলিতে যে কেন্দ্র স্থাপিত হয় তাকে G.TS পিলার বলে। ১৮০২ সালের ১০ই এপ্রিল G.TS এর কাজ শুরু হওয়ার ঐ দিনকে জাতীয় জরিপ দিবস হিসাবে পালন করা হয়। এই কার্যের Director ছিলেন জর্জ এভারেস্ট, পরবর্তীকালে যার নামে পৃথিবীর উচ্চতম শৃঙ্গের নাম দেন জরিপবিদ রাধানাথ শিকদার।


No comments:

Post a Comment